বর্ণিল ফুলের রাজত্বে বেরোবি ক্যাম্পাস
মো: পারভেজ সেখ
৪০০ প্রজাতির প্রায় ৩৬ হাজার গাছের চাদরে ঢাকা ৭৫ একরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়। রংপুর সদরের পার্কের মোড়ে অবস্থিত এ বিশ্ববিদ্যালয়ে বছরের ছয়টি ঋতুতেই বিচিত্র পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায় ।শীতকালে যেমন ঘন কুয়াশার সাথে হিমেল বাতাস পুরো ক্যাম্পাসের পরিবেশকে নৈসর্গিক করে তোলে তেমনি গ্রীষ্মকালের প্রচন্ড দাবদাহের মাঝে বিচিত্র ফুল ক্যাম্পাসকে দেয় নতুন প্রাণের উচ্ছ্বাস। প্রকৃতিতে এখন চলে গ্রীষ্মকাল। গ্রীষ্মের তাপদাহের মাঝেই কৃষ্ণচূড়া, জারুল, সোনালু,বাদর লাঠীসহ নানা ফুলে সেজেছে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পচাত্তর একর।
গ্রীষ্ম শুধু উত্তাপই ছড়ায় না প্রকৃতিকে দেয় রঙিন অনুভব, প্রকৃতির চিত্রপটে আঁকে এক অনবদ্য নান্দনিকতা তার প্রমাণ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক সংলগ্ন কৃষ্ণচূড়া সড়কের সারি সারি কৃষ্ণচূড়া গাছের রাঙা ফুলের ভীড়ে যেন হারিয়ে গেছে গাছের সবুজ পাতা। রাস্তার ধারে ঝরে পড়া ফুলের পাপড়িগুলো মনে হয় প্রকৃতি যেন বিছিয়ে দিয়েছে এক ফুলেল গালিচা।কৃষ্ণচূড়ার এ রক্তিম রাজত্ব শোভা ছড়াচ্ছে পুরো ক্যাম্পাস জুড়ে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সীমানা প্রাচীর সংলগ্ন ঢাকা- কুড়িগ্রাম মহাসড়কের পাশে সারি সারি জারুলের বেগুনী রঙ আগত দর্শনার্থীদের বাইরে থেকেই যেন অভিবাদন জানাচ্ছে। জারুলের বেগুনী রঙের ঝলকানিতে এক অনন্য প্রাকৃতিক দৃশ্যের সৃষ্টি হয়েছে ক্যাম্পাস জুড়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্যারেজ রোড, স্মারক মাঠ,ভিসি মাঠ, আবাসিক হল ও একাডেমিক ভবন ঘিরে আমেজ ছড়াচ্ছে ডম্বিয়া,মণিমালা,বসন্তমঞ্জরী,সোনালুসহ বিচিত্র মনোমুগ্ধকর ফুল। ক্লাস, পরীক্ষা, প্রেজেন্টেশন, ভাইবার ক্লান্তি নিয়ে থাকা শিক্ষার্থীদের অবসাদগ্রস্থতা দূর করতে প্রকৃতি যেন নিঃস্বার্থভাবে নিজেকে বিলিয়ে দিচ্ছে।
নিজ ক্যাম্পাসের সৌন্দর্যে বিমোহিত অর্থনীতি বিভাগের নবীন শিক্ষার্থী জারিন তাসনিম ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য্য বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, “বেরোবিতে এসে প্রথমেই যে জিনিসটা আমার মন কেড়েছে তা হলো কৃষ্ণচূড়া রোড। এমনিতেও কৃষ্ণচূড়া আমার ফুল। যখন কৃষ্ণচূড়া রোডে আসি মনে হয় যেন আমি ফুলের দুনিয়ায় চলে এসেছি। সবুজের মাঝে লাল, দেখতেই অন্যরকম লাগে। আর জারুল ফুল। সে অন্যরকম একটা মায়া। ক্যাম্পাসের বিভিন্ন ফুলের দিকে তাকালে আর অন্যদিকে তাকাতেও ইচ্ছা করে না। বেরোবির এই রং-বেরঙের ফুলের সৌন্দর্যই আমায় বার বার আকর্ষণ করে।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মো: রবিউল ইসলাম বলেন, “ক্যাম্পাসে বর্তমানে নানা রঙের ফুলে ভরে উঠেছে প্রকৃতি। প্রতিদিনের ক্লাস ও ব্যস্ততা শেষে যখন এই ফুলগুলো চোখে পড়ে, তখন মন সত্যিই প্রশান্তিতে ভরে যায়। ক্যাম্পাসের প্রতিটি কোনায় ফুটে থাকা ফুলগুলো শুধু পরিবেশকেই নয়, আমাদের মনকেও রাঙিয়ে তোলে। এই সৌন্দর্য আমাদের একঘেয়েমি দূর করে, নতুন করে চিন্তা ও কাজের অনুপ্রেরণা জোগায়। আমি মনে করি, এমন পরিবেশ শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত সহায়ক।”
এছাড়া রংপুর নগরীর বিভিন্ন এলাকা থেকে দর্শনার্থীরা গ্রীষ্মে ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য দেখতে ভীড় জমাচ্ছেন। আনন্দময় ও রঙিন মুহূর্ত গুলো ধরে রাখার জন্য নিজেদেরকে ক্যামেরা বন্দি করে নিচ্ছেন প্রিয় মানুষের সাথে।
গ্রীষ্মের রোদ শুধু পোড়ায় না,প্রকৃতিকে রাঙিয়ে তোলেনতুন ক্যানভাসে। গ্রীষ্মে প্রকৃতিই যেন হয়ে উঠেছে শ্রেষ্ঠ শিক্ষক – যিনি রঙে, ঘ্রাণে আর ছায়ায় শেখায় কীভাবে ক্লান্তির ভিড়ে খুঁজে নিতে হয় প্রশান্তি।