মোঃ মামুন(ডিমলা) নীলফামারী প্রতিনিধি
শিক্ষার ভিত্তি হিসেবে পরিচিত প্রাথমিক বিদ্যালয়। কিন্তু নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার অধিকাংশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সরকারি নিয়ম-কানুন ও সময়সূচির কোনো তোয়াক্কা না করার অভিযোগ উঠেছে। শিক্ষকদের স্বেচ্ছাচারিতার কারণে ব্যাহত হচ্ছে নিয়মিত পাঠদান। এরই ধারাবাহিকতায় আমিন পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নির্ধারিত সময়ের আগেই ছুটি দিয়ে শিক্ষক-কর্মচারীরা বিদ্যালয় ত্যাগ করার ঘটনায় স্থানীয় অভিভাবক ও এলাকাবাসীর মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
সরকার ২০২০ সালে প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে সময়সূচি পরিবর্তন করে দ্বি-শিফট পদ্ধতি চালু করলেও আমিন পাড়া বিদ্যালয়ে তার কোনো বাস্তবায়ন দেখা যাচ্ছে না। নতুন সময়সূচি অনুযায়ী সকাল ৯টায় পাঠদান শুরু হওয়ার কথা থাকলেও বেশিরভাগ শিক্ষক সকাল ১০টা থেকে ১১টার মধ্যে বিদ্যালয়ে আসেন। এরপর কোনোভাবে ২টি বা ৩টি ক্লাস নিয়ে দুপুর ২টার মধ্যেই বিদ্যালয় ছুটি দিয়ে চলে যান। ফলে ৪ জন শিক্ষকের মধ্যে কেউই পূর্ণ সময় ক্লাসে উপস্থিত থাকেন না, যার ফলে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ায় মারাত্মক ব্যাঘাত ঘটছে।
সোমবার (২১ জুলাই) দুপুর ২টা ২৫ মিনিটে সরেজমিনে উপজেলার ঝুনাগাছ চাপানি ইউনিয়নের আমিন পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের মূল ফটকসহ শ্রেণিকক্ষ ও অফিসকক্ষে তালা ঝুলছে। কোনো শিক্ষক বা শিক্ষার্থীর উপস্থিতি নেই। এমনকি বিদ্যালয়ের মাঠে গবাদি পশু ঘাস খাচ্ছে।
বিদ্যালয়টিতে বর্তমানে প্রধান শিক্ষক হিসেবে খলিলুর রহমান এবং সহকারী শিক্ষক মোফাসেল হোসেন, বাবুল হোসেন ও মোসাম্মৎ রাবেয়া খাতুন কর্মরত রয়েছেন। তবে রাবেয়া খাতুন বর্তমানে নীলফামারী পিটিআই-এ প্রশিক্ষণে রয়েছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা লায়লা বেগম, ঝরনা খানম, মমিনুর রহমান, হযরত আলী ও হরিকিশোর রায়সহ একাধিক অভিভাবক জানান, নিয়মিতভাবে দুপুর ১টা থেকে ১টা ৩০ মিনিটের মধ্যেই বিদ্যালয় ছুটি দেওয়া হয়। এমনকি মাঝে মধ্যেই পুরো দিন বিদ্যালয় বন্ধ থাকে। ষান্মাসিক পরীক্ষার পরেও নিয়মিত ক্লাস না হওয়ায় শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। এতে অভিভাবকরা বাচ্চাদের বেসরকারি বিদ্যালয়ে পাঠানোর কথা ভাবতে বাধ্য হচ্ছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক খলিলুর রহমান বলেন, “প্রচণ্ড গরমের কারণে স্কুল ছুটি দিয়েছি।” তবে ছুটি দেওয়ার আগে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি নেওয়া হয়েছিল কি না—এই প্রশ্নের জবাবে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
এ বিষয়ে ডিমলা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বীরেন্দ্রনাথ রায় বলেন, “বিষয়টি আপনাদের মাধ্যমে জানতে পারলাম। নির্ধারিত সময়ের আগেই বিদ্যালয় বন্ধ করা নিঃসন্দেহে অনিয়ম। আমরা দ্রুত তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।”
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার মানোন্নয়নে সরকারের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ মাঠপর্যায়ে কার্যকর না হলে, ভবিষ্যত প্রজন্মের শিক্ষার ভিত্তি দুর্বল হয়ে পড়বে—এমন উদ্বেগও প্রকাশ করেছেন সচেতন অভিভাবক মহল।