মোঃ নাজমুল শেখ, মাদারীপুর জেলা প্রতিনিধি
মাদারীপুরে শত বছরের পুরোনো একটি বটগাছ কাটা নিয়ে বিভিন্ন মাধ্যমে সমালোচনা চলছে। গাছটিকে ঘিরে লোকজন ‘শিরক’ করতো বলে স্থানীয় কিছু মুসল্লি গতকাল সোমবার (৫ মে) গাছটি কেটে ফেলেছেন। এ ঘটনায় জেলা বন বিভাগ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মাদারীপুর সদর উপজেলার শিরখাড়া ইউনিয়নের আলম মীরের কান্দি এলাকায় ১০০ বছরের পুরোনো ওই বটগাছ ঘিরে কিছু মানুষের মধ্যে অলৌকিক ধারণা আছে। স্থানীয় ও দূর-দূরান্তের কিছু লোক বট গাছের গোড়ায় মোমবাতি জ্বালিয়ে মানত করতো, লাল কাপড় বেঁধে দিতো। যা ইসালামের দৃষ্টিতে শিরক। তাই লোকজনকে শিরক থেকে ফেরাতে গাছটি কেটে ফেলা হয়েছে। তবে স্থানীয় অনেকেই মনে করেন গাছটি কাটা ঠিক হয়নি।
স্থানীয় বাসিন্দা সোহেল সিকদার বলেন, প্রচণ্ড রোদে অনেকে এই গাছের নিচে ছায়ায় বসে থাকতো। তাছাড়া সৌন্দর্যের দিক থেকেও গাছটি অনেকটাই চোখে পড়ার মতো। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার পাশাপাশি শত শত পাখির অভয়ারণ্য এ গাছ। এভাবে গাছটি একেবারে কেটে ফেলা ঠিক না।
মাহবুব নামে আরেকজন বলেন, এই বটগাছটা কারো কোনো বাধা হওয়ার কারণ নেই। কেন কী কারণে গাছটি কাটা হলো তাও জানি না। হঠাৎ করে শুনি গাছটি কেটে ফেলেছে। এটা খুবই দুঃখজনক বিষয়। গাছটি কাটায় এলাকার লোকজন প্রতিবাদ জানিয়েছে। গাছটি কাটার মতো কোনো কারণ খুঁজে পাচ্ছি না। তবে মাঝে মাঝে দেখা যেত এই গাছের নিচে কিছু ছোট হাড়ি রাখা এবং গাছের সাথে কাপড় বাঁধা। যদিও এগুলো ইসলামের দৃষ্টিতে শিরক। তারপরও গাছটি তো দোষ করেনি।
স্থানীয় এক বৃদ্ধ বলেন, গাছটি মানুষের বিভিন্ন উপকারে আসতো। আমরা কৃষি কাজ শেষে এই বটগাছের নিচে বসে জিরাইতাম। নদী পাড় হওয়ার সময় নৌকা আসতে দেরি হলে অনেক মানুষ এই গাছের ছায়ায় দাঁড়াইতো। আবার আমরা গোসলের আগে ও পরে এই গাছের নিচে বসতাম। কিন্তু এখন তো আর সেই জায়গা রইল না।
স্থানীয় আরেক ব্যক্তি বলেন, হুজুরদের গাছটি কাটতে দেখে ওখানে গিয়েছিলাম। তখন গাছের মালিক সত্তার হাওলাদারকে জিজ্ঞেস করলাম গাছটি কাটছেন কেন? সে বলল- এই গাছে মোমবাতি, আগরবাতি জ্বালায়, এখানে গাঁজাসহ বিভিন্ন মাদকের আড্ডা হয়। তাই গাছটি বেচে দিছি। তবে আমি মনে করি গাছটি কাটা উচিত হয়নি। সকলকে বোঝানো উচিত ছিল।
বটগাছ কাটায় অংশ নেওয়া আব্দুল কুদ্দুস নামে স্থানীয় এক মুসল্লি বলেন, এই বটগাছে মিষ্টি দেয়, সিরনি দেয়, লাল কাপড় বাঁধে, এটাকে মনে করে সৃষ্টিকর্তা। যার কারণে এটা শিরক, এটা একটা গোনাহের কাজ। এই গোনাহের কাজ যাতে না হয় এই কারণে স্থানীয় আলেম ও ভাই-ব্রাদাররা মিলে গাছটি কেটেছি। তবে আমরা জানি একটা গাছ প্রচুর পরিমাণে অক্সিজেন দেয়। আমরা সবাইকে আশ্বাস দিচ্ছি এখানে আমরা তিনটি গাছ রোপণ করব। আমরা জমির মালিকের সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি বলেছেন, ‘যেহেতু গাছটির জন্য গোনাহের কাজ হচ্ছে, তাই গাছটি কেটে ফেলেন’।
মাদারীপুর জেলা বন কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম খান বলেন, আমি ঘটনাস্থলে গিয়েছি এবং আশপাশের অনেকের সাথে কথা বলেছি। গাছের বেশির ভাগ ডালপালা ও বেশির ভাগ অংশ কেটে ফেলা হয়ে। জমির মালিক সত্তার হাওলাদার বলেছেন- ‘আমার জমির ওপর গাছ, আমি ১৫০০ টাকায় বিক্রি করে দিয়েছি।’ আমার ধারণা জমির মালিককে ম্যানেজ করা হয়েছে। আমরা বিষয়টি জেলা প্রশাসক স্যারকে জানিয়েছি এবং তদন্ত করা হচ্ছে।
আমি সরজমিনে গিয়ে যতটুক জেনেছি তাতে মনে হয়েছে এখানে অনেক খারাপ কাজ হতো ও শিরকের মত বড় গুনাহের কাজ ও হতো।