মনা যশোর জেলা প্রতিনিধিঃ
২০১৬ সালের ৪ আগষ্ট বেনাপোল পোর্টথানার সাবেক ছাত্র শিবিরের সাধারণ সম্পাদক মো.রেজওয়ান হোসেন তৎকালীন বেনাপোল পোর্টথানার ওসি অপূর্ব হাসান,এসআই নুরে আলম এবং অন্যান্য পুলিশ কর্তৃক গুম এবং খুন হয়। সে সময় রেজওয়ানের মা ও তার পরিবারের সদস্যরা রেজওয়ান'কে ফিরে পাওয়ার জন্য ওসি অপূর্ব হাসান বরাবর মৌখিক এবং লিখিত ভাবে অভিযোগ নামা দাখিল করলে, তাদের সে আবেদনে সাড়া দেননি ওসি অপূর্ব হাসান এবং এসআই নুর আলম। রেজওয়ান শিবির নেতা বলে পরিবারের সদস্যদেরকে থানা থেকে বের করে দেওয়া হয়। গুমের ব্যাপারে সে সময় ফ্যাসিষ্ট আওয়ামী সরকারের নেতাদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও বিচার পাইনি রেজওয়ানের পরিবার। কোন উপায়ান্তর না পেয়ে রেজওয়ানের মা এবং আওয়ামীলীগ কর্তৃক অত্যাচারিত তার পরিবার বেনাপোল ছেড়ে রাজধানী ঢাকার একটি হোটেলে "সংবাদ সন্মেলন" করে। "পুলিশই যদি বেআইনি ও অমানবিক কাজ করে তাহলে আমরা যাবো কোথায়?" এমন একটি শিরোনাম দিয়ে "দৈনিক সংগ্রাম"পত্রিকা নিউজ পাবলিশড করে,সমগ্র দেশের মানুষ জানতে পারে।
২০২৪ এ জুলাই-আগষ্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ফ্যাসিষ্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়। দেশ পরিচালনার জন্য ক্ষমতা গ্রহণ করে অধ্যাপক ড.ইউনুস এর নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার। ফ্যাসিষ্ট শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে গণঅভ্যুত্থানে নিহত শত শত ছাত্র-জনতার দ্রুত বিচারকার্য পরিচালনার জন্য গঠন করা হয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এ সব মামলা সহ আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে ঘটিত গুম-খুনের মামলারও বিচার কাজ শুরু করেছে ট্রাইব্যুনাল।
বেনাপোল পোর্টথানার পুলিশ কর্তৃক গুম-খুন হওয়া বেনাপোল পোর্টথানার ছাত্র শিবির সেক্রেটারী রেজওয়ান হোসেনের মামলাটি "আন্তর্জাতীক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে গৃহীত হলে,তদন্তের জন্য আজ বুধবার(১৫ অক্টোবর) সকালে "আন্তর্জাতীক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল" এর তদন্ত কর্মকর্তা মোয়াজ্জেম হোসেনের নেতৃত্বে ০৩ সদস্যের একটি ট্রাইব্যুনাল টিম বেনাপোলে আসে। ট্রাইব্যুনাল টিমটি প্রথমে রেজওয়ানের গ্রামের বাড়ী শার্শা উপজেলার মহিষাডাঙ্গায় যান,সেখানে তার মা-বাপের সাথে দেখা করে তদন্তের জন্য গুম হওয়ার স্থান বেনাপোল ইউনিয়ন ভূমি অফিস প্রাঙ্গণে উপস্থিত হন ট্রাইব্যুনাল টিম। সেখানে রেজওয়ানের পিতা সহ তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের আনুষ্ঠানিক ভাবে স্বাক্ষ্য গ্রহণ শুরু করে ট্রাইব্যুনাল টিম।
এদিকে,তদন্ত স্থানে উপস্থিত নিহত রেজওয়ানের ভাই রিপন হোসেন ঘটনার পূর্ণবিবরণ তুলে ধরে বলেন-
রেজওয়ান হোসেন শার্শা উপজেলার বাগআঁচড়া ডা. শেখ আফিল উদ্দীন ডিগ্রী কলেজের ইতিহাস বিষয়ের অনার্স ২য় বর্ষের ছাত্র। সে ২০১৬ সালের ৪ আগষ্ট বই কেনার উদ্দেশ্যে বেনাপোল বাজারের দূর্গাপুরস্থ রোডের বেনাপোল ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সামনে পৌঁছালে,সেদিন বেলা আনুমানিক ১২ টার সময় সাদা পোশাকে আইন শৃংখলা বাহিনীর পরিচয়ে তাকে জোর করে তুলে নিয়ে যায়। স্থানীয় প্রত্যক্ষ দর্শীদের মাধ্যমে জানতে পারি বেনাপোল পোর্ট থানার এস আই নুর আলমের নেতৃত্বে রেজওয়ান হোসেনকে তুলে নেওয়া হয়।
আমরা সংবাদ পাওয়া মাত্রই ঐদিন ৪ আগষ্ট ২০১৬ পোর্ট থানায় যোগাযোগ করি। কিন্তু থানার পক্ষ থেকে বলা হয় তারা রেজওয়ানকে গ্রেফতার করেনি। একদিন পর পোর্ট থানায় সাধারণ ডায়েরি করতে গেলে থানা কোনো অভিযোগ গ্রহণ ও খোজার ব্যাপারেও কোনো সহযোগতিা করেনি। পুত্র হারানোর শোকে আমার পিতা-মাতা বাকরুদ্ধ প্রায়। আমরা আগেও বলেছি এখনও বলছি, রেজওয়ান হোসেনকে ওসি অপূর্ব হাসান ও এস আই নুরআলম তুলে নিয়ে গেছে। পুত্র হারানোর শোক কতটা কঠিন তা যাদের হারিয়েছে একমাত্র তারাই বুঝতে পারবে। আমরা এর বিচার চাই।
তদন্ত স্থানে উপস্থিত বেনাপোল ল্যান্ড ইমপোর্ট এন্ড এক্সপোর্ট এ্যাসোসিয়েশনের নব-নির্বাচিত সভাপতি ও ইন্ডাষ্ট্রীয়াল বিজনেসম্যান ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন(আইবিডব্লিউএফ) এর ভাইস প্রেসিডেন্ট মতিয়ার রহমান বলেন,গত ১৭ বছর ফ্যাসিষ্ট আওয়ামী সরকার গুম-খুনের পাশাপাশি সাধারণ মানুষ সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের উপর অমানবিক নির্যাতন,অত্যাচার চালিয়েছিল। বিশেষ করে জামায়াতে ইসলামী'র হাজার হাজার নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের উপর বিভিন্ন ভাবে মামলা-হামলা করে তাদের ঘরছাড়া করেছিল ফ্যাসিষ্ট শেখ হাসিনা সরকার। সেই ফ্যাসিষ্ট সরকারের অমানবিক নির্যাতনের স্বীকার বেনাপোল পোর্টথানার সাবেক ছাত্র শিবির সেক্রেটারী রেজওয়ান। তদন্তের কাজ দ্রুত শেষ করে আসামীদেরকে আইনের আওতায় আনার জন্য ঢাকা থেকে আগত "আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল" তদন্ত কর্মকর্তাদের প্রতি আহবান জানান। রেজওয়ানের আত্মার মাগফিরাত কামনা এবং শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেন এই নেতা।
তদন্ত স্থানে জামায়াতের অন্যান্য নেতৃবৃন্দের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন,বেনাপোল পোর্টথানার আমির- রেজাউল ইসলাম,সেক্রেটারী-মাওলানা ইউসুফ,ওলামা বিভাগের সভাপতি-মাওলানা ইলিয়াস,বেনাপোল পোর্টথানার বর্তমান ছাত্র শিবির সভাপতি-মাহাদী হাসান ও সেক্রেটারী-আশরাফুজ্জামান রনি সহ অনেকে।