মনা যশোর প্রতিনিধিঃ
যশোরের বেনাপোল আন্তর্জাতিক চেকপোস্ট এলাকা এখন কোলাহল মুক্ত, নেই যাত্রীর চাপ। প্রতিদিন অলস সময় কাটাচ্ছেন এখানে কর্মরত কর্মকর্তা কর্মচারীরা।
সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব ভিসা প্রদানের ক্ষেত্রে ভারত সরকার বিধিনিষেধ আরোপ করায় কমেছে দু‘দেশের মধ্যে যাত্রী পারাপার।
আগে প্রতিদিন যেখানে ৭ থেকে ৯ হাজার যাত্রী পারপার হত, এখন সেখানে প্রতিদিন পারাপার হচ্ছে দেড় থেকে দুই হাজার যাত্রী। রাজনৈতিক পট পরিবর্তন পরবর্তী সময়ে নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে চিকিৎসা ছাড়া বাংলাদেশিদের সব ভিসা বন্ধ রেখেছে ভারত। এতে কমে গেছে যাত্রী যাতায়াত। বিভিন্ন রুটের পরিবহনগুলো সামান্য কয়েকজন যাত্রী নিয়ে যেতে হচ্ছে। এতে তাদের গাড়ির তেল খরচ হচ্ছে না। ফলে পরিবহন স্টাফদের বেতন ভাতা না দিতে পারায় তারা কাজ ছেড়ে চলে যাচ্ছে।
যাত্রীর অভাবে দেশ ট্রাভেলসসহ কয়েকটি পরিবহন বন্ধ করে দিতে মালিকপক্ষ বাধ্য হয়েছে। ভিসা বন্ধ থাকায় দুই দেশের ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে মনে করেন নাগরিকরা। বেনাপোল বন্দর থেকে ভারতের কোলকাতা শহরের দূরত্ব মাত্র ৮৪ কিলোমিটার। ভ্রমণ, ব্যবসা চিকিৎসা বা অন্যান্য কাজে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে যাতায়াতকারীদের বড় অংশ ব্যবহার করেন বেনাপোল-পেট্রাপোল রুট।
ইমিগ্রেশন সুত্র জানিয়েছে, গত ১ মে থেকে ৩১ মে পর্যন্ত এক মাসে ভারতে গেছে ২৩ হাজার ৭২৪ জন আর ভারত থেকে এসেছে ২১ হাজার ৫৫৬ জন পাসপোর্টযাত্রী। এক মাসে পারাপার হয়েছে মোট ৪৫ হাজার ২৮০ জন যাত্রী। তবে এদের মধ্যে ভারতীয় পাসপোর্টযাত্রী আসা ও যাওয়া অনেকাংশে বেড়েছে।
এই এক মাসে ভারতে যাতায়াত করেছে ১৯ হাজার ৫০৮ জন বাংলাদেশি ও ২৫ হাজার ৬৭৮ জন ভারতীয় যাত্রী ও ৯৪ জন অন্যান্য দেশের পাসপোর্টযাত্রী। এদের মধ্যে ভারত থেকে বিজনেস ভিসা নিয়ে আসা ল্যাগেজ পার্টি যাত্রীর সংখ্যা বেশি। যাত্রী পারাপার কমে যাওয়ায় ‘ভ্রমনকর’ বাবদ রাজস্ব আদায়ও কমে যাচ্ছে। ৫ আগস্টের পর থেকে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
কাস্টমস কর্তৃপক্ষ বলছেন, বছরে এ বন্দরে ভ্রমণ কর থেকে রাজস্ব আদায় হয় ১৮২ কোটি টাকা। ৫ আগস্টের আগে প্রতিমাসে গড়ে ১৫ কোটি টাকার রাজস্ব আয় হতো। বর্তমানে রাজস্ব আদায় হচ্ছে মাসে তিন কোটি টাকা।
বেনাপোল আন্তর্জাতিক চেকপোস্ট ইমিগ্রেশনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইব্রাহিম আহম্মেদ বলেন, বাংলাদেশ থেকে যারা ভারতে যান কেবলমাত্র সেই সব যাত্রী প্রত্যেকেই ‘ভ্রমন কর’ বাবদ এক হাজার টাকা এবং ‘প্যাসেঞ্জার টার্মিনাল’ ফি বাবদ ৫৫ টাকা দিয়ে থাকেন। ফেরত আসা যাত্রীরা এই করের আওতামুক্ত। স্বাভাবিক সময়ে বেনাপোল দিয়ে প্রতিদিন গড়ে সাড়ে ৫ হাজার থেকে ৬ হাজার যাত্রী ভারতে যেত। এখন সেটা কমে গড়ে দেড় হাজারের নীচে এসে দাঁড়িয়েছে।
ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (টোয়াব) সভাপতি মোঃ রফিউজ্জামান বলেন, বাংলাদেশিদের বিদেশ ভ্রমণ কমে গেছে মূলত ভিসা প্রাপ্তি জটিল হওয়ার কারণে। বর্তমানে ভারত ভিসা দিচ্ছে না। গত কয়েক মাসে যারা ভারত ভ্রমণ করেছেন, তাদের বেশির ভাগের ভিসাই আগে ইস্যু করা ছিল। সেসব ভিসা শেষ। ভারতের ভিসা সীমিত থাকায় সামনের দিনগুলোয় বাংলাদেশি পর্যটকের বিদেশযাত্রা আরও কমবে। যার প্রভাব পড়েছে সরকারের ভ্রমণকর আদায়ের ক্ষেত্রে। একই ভাবে ভারতের ব্যবসা বাণিজ্যেও প্রভাব পড়েছে।
ভারতে চিকিৎসা করাতে আসা রবিউল ইসলাম বলেন, আমি চিকিৎসার জন্য ভারত যাচ্ছি। বর্তমানে ভিসার খুব সমস্যা। আবেদনের দীর্ঘদিন পর কোন রকম চিকিৎসার জন্য মেডিকেল ভিসা পেলেও ভ্রমন ভিসা একদমই নেই। আগামী দিনে আর ভিসা পাব কিনা সন্দেহ আছে।
ভারতগামী যাত্রী কমলা রানী বলেন, আগে থেকে জানতাম ইমিগ্রেশনে অনেক লম্বা লাইন থাকে, অনেক যাত্রীর ভীড় থাকতো। কিন্তু আজ এসে দেখলাম মানুষজন একেবারে নেই বললেই চলে। আমরা খুব নিরিবিলি যাচ্ছি। এখন যেহেতু ভারত সরকার ভিসা দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। আমাদের ভিসা শেষ পর্যায়ে। পরবর্তীতে আর ভিসা পাব কিনা জানিনা।
ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ায় যশোরের মনোতোষ সাহা, ঢাকার আনন্দ সরকার সোমবার সকালে ভারত থেকে ফিরেছেন। মনোতোষ সাহা বলেন, ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছিল তাই তড়িঘড়ি করে ভারতে আত্মীয় স্বজনদের সাথে একটু দেখা করে আসলাম। তাদের সাথে দেখা করাও হল আবার বেড়ানও হল। আনন্দ সরকার বলেন, ভিসার মেয়াদ এ মাসেই শেষ তাই ভারতে ডাক্তার দেখাতে গিয়েছিলাম।
বেনাপোলের ফাইভ স্টার পরিবহন এর ম্যানেজার আশাদুজ্জামান আশা বলেন, ভিসা বন্ধ থাকায় তাদের পরিবহন ব্যবসায় লোকশান গুনতে হচ্ছে। একই কথা বলেন, আলম মানিচেঞ্জার এর সত্বাধিকারী মশিয়ার রহমান। তিনি বলেন ভারতে চিকিৎসা, ব্যবসায়ী ছাত্রসহ বিভিন্ন কাজে এ পথে যেত আগে প্রায় ১০ হাজার লোকের উপরে যাত্রী। তাতে তাদের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে ডলার কেনা বেচা হত। এতে করে কর্মচারীসহ নিজেরা স্বাচ্ছন্দে কেটে যেত। বর্তমান যে অবস্থা অফিস চালানো দুস্কর হয়ে পড়েছে।
বেনাপোল গ্রিন লাইন পরিবহনের ম্যানেজার রবীন্দ্রনাথ বলেন, তাদের এসি গাড়ি। সামান্য কয়েকজন যাত্রী নিয়ে রাজধানী ঢাকার উদ্দেশ্য যেতে হয়। এতে তাদের গাড়ির তেল খরচ উঠছে না। এখান থেকে যে সকল পরিবহন ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছেড়ে যায় তারা সকলে পড়েছে বিপাকে। ফলে পরিবহন স্টাফদের বেতন ভাতা না দিতে পারায় তারা কাজ ছেড়ে দিতে বাধ্য হচ্ছে। যাত্রীর অভাবে দেশ ট্রাভেলসসহ কয়েকটি পরিবহন বন্ধ করে দিতে মালিকপক্ষ বাধ্য হয়েছে।
বেনাপোল আমদানি-রপ্তানি সমিতির সহ-সভাপতি ও যমুনা ট্রেডিং কর্পোরেশন এর সত্বাধিকারী আমিনুল হক আনু বলেন, ভারত ভিসা বন্ধ রাখায় আমাদের ব্যবসায়ীক কাজেও সংকট দেখা দিয়েছে। আমদানি-রপ্তানির কাজে পণ্যর গুনগত মান যাচাইয়ের জন্য ব্যবসায়ীদের ভারত যাতায়াত করা লাগে। বর্তমানে ভিসা না থাকায় তারা ভারত গমন করতে পারছে না। এলসিও খুলতে পারছেন না।
বাংলাদেশ ভারত চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির পরিচালক (ল্যান্ডপোর্ট) মতিয়ার রহমান বলেন, ভিসাকেন্দ্রগুলো এখন কেবল জরুরি মেডিকেল ও স্টুডেন্ট ভিসার জন্য সীমিত পরিসরে সøট দিচ্ছে। ব্যবসা ও ভ্রমন ভিসার যাত্রীদের সংখ্যা নেই বললেই চলে। ভ