মোঃমামুন ডিমলা নীলফামারী প্রতিনিধি
:
নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার প্রাণিসম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতালে সরকারি চিকিৎসা সেবা নিতে আসা একাধিক কৃষক ব্যক্তিগতভাবে অর্থ দাবির অভিযোগ করেছেন। এতে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবার আশা নিয়ে আসা সাধারণ খামারিরা চরম ভোগান্তির সম্মুখীন হচ্ছেন। ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করছেন, সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে ওষুধসহ চিকিৎসা সেবা দেওয়ার কথা থাকলেও কিছু অসাধু কর্মকর্তা সুকৌশলে টাকা আদায় করছেন।
সম্প্রতি এ ঘটনার শিকার হয়েছেন উপজেলার খালিশাচাপানী ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের ছোটখাতা গ্রামের কৃষক শরিফুল ইসলাম। গত ১৮ আগস্ট, সোমবার সকাল ১০টায় তিনি তার একটি বকনা বাছুরের হার্নিয়া অপারেশনের জন্য উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসে আসেন।
শরিফুল ইসলাম জানান, বাছুরটি পরীক্ষা করার পর কর্তব্যরত ভেটেরিনারি সার্জন ডা. মো. আসাদুজ্জামান তাকে এবং তার বাবাকে ব্যক্তিগতভাবে চেম্বারে ডেকে বলেন, “আপনার গরুর হার্নিয়া অপারেশনের জন্য উন্নত মানের অ্যানেস্থেসিয়া, বিশেষ সার্জিক্যাল সরঞ্জাম এবং সার্জারির জন্য ২/৩ ঘণ্টা সময় লাগবে। এর জন্য চার হাজার টাকা খরচ হবে।”
অপ্রত্যাশিত এ দাবি শুনে হতবাক হন শরিফুল ইসলাম। তিনি আসাদুজ্জামান স্যারকে জানান, নদীভাঙন ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে এত বড় অঙ্কের টাকা দেওয়া তার পক্ষে সম্ভব নয়। শরিফুল ইসলাম বলেন, “আমরা অসহায় মানুষ, এত টাকা কোথায় পাবো?”
কিন্তু সার্জন ডা. আসাদুজ্জামান বলেন, টাকা না দিলে বিনামূল্যে হাসপাতালের সেবা দেওয়া যাবে না এবং অন্য কোথাও যেতে হবে। তিনি জানান, বিনামূল্যে চিকিৎসা চাইলে ঢাকায় রেফার্ড করা হবে, সেখানে বিনামূল্যে চিকিৎসা করানো হয়—এখানে নয়। গরু নিয়ে ঢাকা যাওয়া-আসার কথা চিন্তা করে বিকল্প হিসেবে শরিফুল ইসলামের বাবা দুই হাজার টাকা দেওয়ার প্রস্তাব দিলেও ডা. আসাদুজ্জামান তা প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি আরও বলেন, “আমি যে প্রেসক্রিপশন করে দেব তার দাম ২ হাজার ৫০০ টাকা। আর ২/৩ ঘণ্টার সার্জারির দাম কে দেবে?”
এরপর আবারও অনুরোধ করা হলে তিনি শরিফুল ইসলামকে সহকর্মী বজলার রহমান সেলিম (ডিএফএ) সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন। শরিফুল ইসলাম জানান, তারা সেলিমের চেম্বারে গিয়ে সব খুলে বলার পর তিনি জানান, “স্যার যেটা বলেছে সেটাই ফাইনাল। আপনি চিকিৎসা নিলে নিতে পারেন, নইলে কিছুই করার নাই।”
নিরুপায় হয়ে শরিফুল ইসলাম উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মদন কুমার রায়কে মোবাইলে কল দিয়ে বিস্তারিত ঘটনা জানান। যদিও তিনি বলেন, “আপনি থাকেন, আমি উনার সাথে কথা বলে আপনার কাজটি করে দিতে বলছি।” কিন্তু দুপুর ২টার পর বজলার রহমানের ফোন আর ধরেননি ডা. মদন কুমার। তখন শরিফুল ইসলাম এক বুক কষ্ট নিয়ে বাসায় চলে আসেন।
ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, “আমাদের মতো সাধারণ খামারিদের জন্য সরকারি হাসপাতালে এভাবে টাকা দাবি করা অত্যন্ত অন্যায়। সরকারি চিকিৎসা সেবার মূল উদ্দেশ্যই হলো বিনামূল্যে সেবা নিশ্চিত করা, অথচ আমরা তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছি।”
উপজেলা ভেটেরিনারি সার্জন ডা. মো. আসাদুজ্জামান এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, সরকারি সেবায় টাকা চাওয়ার কোনো ঘটনাই ঘটেনি। ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়ার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “ব্যক্তিগত শত্রুতায় ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিতে পারেন। সেটা আমি জানি না।”
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মদন কুমার রায় বলেন, “সরকারি সেবায় টাকা নেওয়ার সুযোগ নেই। উনি যদি টাকা চেয়ে থাকেন সেটা ঠিক হয়নি। এ ঘটনায় আরও কয়েকজন সাংবাদিক এসেছিলেন—যাচাই-বাছাই করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. সিরাজুল হক বলেন, “অফিস চলাকালীন সময়ে সরকারি সেবায় টাকা চাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। উনি যদি চেয়ে থাকেন এবং সেটা যদি তদন্তে প্রমাণিত হয় তাহলে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
স্থানীয় একাধিক খামারিও একই ধরনের অভিযোগ করেছেন। তারা জানান, এটি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়; অনেক কৃষকই বিভিন্ন সময় এভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। তারা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে অনুরোধ করেছেন যেন ডিমলা উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরে বিনামূল্যে, স্বচ্ছ ও সুষ্ঠু চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা হয় এবং খামারি ও কৃষকদের হয়রানি থেকে মুক্তি দেওয়া হয়।