জিল্লুর রহমান ষ্টাফ রিপোর্টার কয়রা ( খুলনা ):
সুন্দরবনের পশ্চিম বিভাগের খুলনা রেঞ্জে গোলপাতা আহরণে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।
সুন্দরবনের পশ্চিম বিভাগের খুলনা রেঞ্জে গোলপাতা আহরণে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। গোলপাতা আহরণের জন্য পদে পদে ঘুস দিতে হচ্ছে বলে অভিযোগ বাওয়ালিদের। বনজীবীরা বলছেন, ‘গোলপাতা আহরণের জন্য নৌকাপ্রতি সরকারকে যে টাকা রাজস্ব দিতে হয়, বন কর্মকর্তা ও বন রক্ষীদের ঘুস দিতে হচ্ছে এর কয়েকগুণ বেশি।’
বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এবার সুন্দরবন পশ্চিম বিভাগের খুলনা রেঞ্জে গোলপাতা কাটার মৌসুম গত ৩ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয়ে চলবে ৩১ মার্চ পর্যন্ত। প্রথম দফায় ২৮ দিনের অনুমতি পেয়ে ৮৯টি নৌকায় গোলপাতা কেটে লোকালয়ে ফিরেছেন বাওয়ালিরা। বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গোলপাতা আহরণ মৌসুমে একেকটি নৌকায় সর্বোচ্চ ১৮৬ কুইন্টাল অর্থাৎ প্রায় ৫০০ মণ গোলপাতা বহনের অনুমতি দেয় বন বিভাগ। আহরণ করা প্রতি কুইন্টাল গোলপাতার জন্য বন বিভাগকে ৬০ টাকা করে রাজস্ব দিতে হয়।
সুন্দরবনের গোলঝাড় থেকে পাতা কাটার সময় মাঝের কচি পাতার পাশে একটি পূর্ণাঙ্গ পাতা (ঠ্যাকপাতা) রেখে আহরণের নিয়ম রয়েছে। কিন্তু সেই ঠ্যাকপাতা না রেখে ঝাড়ের সব পাতা কাটা হচ্ছে। পাশাপাশি বাওয়ালিরা নির্ধারিত পরিমাণের চেয়ে অতিরিক্ত গোলপাতা নৌকায় বহন করছেন। সরজমিনে সুন্দরবনসংলগ্ন কয়রা নদীর পাড় ও শাকবাড়িয়া এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, নদীর পাড়ে বাঁধা রয়েছে গোলপাতাবোঝাই বড় বড় নৌকা। এসব নৌকায় ৫০০ মণ গোলপাতা বোঝাইয়ের মাত্রা বেঁধে দেয়া হলেও একেকটি নৌকায় দুই থেকে আড়াই হাজার মণ পাতা বোঝাই করা। নৌকার চারপাশে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে বড় বড় গাছের গুঁড়ি। গোলপাতার নিচে রয়েছে সুন্দরী, পশুরসহ মূল্যবান গাছের খণ্ড।
এ অভিযোগের প্রতিক্রিয়ায় বাওয়ালিরা বলছেন, পদে পদে ঘুস লাগায় ক্ষতি পোষাতে নৌকায় বেশি করে গোলপাতা ও কাঠবোঝাই করতে বাধ্য হন তারা। তাদের দাবি, বনদস্যুদের চাঁদার পাশাপাশি ঘুস দিতে হয় বন বিভাগের কর্মকর্তাদেরও। এতকিছুর পর লোকালয়ে আনার পর এক কাউন (১ হাজার ৬৮০টি) গোলপাতা বিক্রি হয় মাত্র ৩ হাজার ২০০ টাকা।
কয়রা এলাকার বাওয়ালি আবদুস সালাম বলেন, ‘৫০০ মণ ধারণক্ষমতাসম্পন্ন একটি গোলপাতার নৌকায় সরকারি রাজস্ব আসে ১২ হাজার টাকার মতো। বিভিন্ন অজুহাতে সবমিলিয়ে আরো প্রায় ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা ঘুস দিতে হয়। এ কারণেই নৌকায় নির্ধারিত পরিমাণের চেয়ে বেশি গোলপাতা নিয়ে আসতে বাধ্য হচ্ছি আমরা।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন কূপ কর্মকর্তা ও বনরক্ষী বাওয়ালি মহাজনদের বাড়তি সুযোগ দিয়ে টাকা নেয়ার কথা স্বীকার করেছেন। তারা বলেছেন, এ টাকা বন বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা থেকে শুরু করে কয়েকটি পর্যায়ে ভাগ-বাটোয়ারা হয়।
তবে নির্ধারিত রাজস্বের বাইরে বাওয়ালিদের কাছ থেকে ঘুস আদায়ের বিষয়ে কিছু জানেন না বলে দাবি করেছেন খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক ইমরান আহমেদ। তিনি বলেন, ‘সুন্দরবন কেন্দ্রিক সব ধরনের অপরাধ দমনে সচেষ্ট রয়েছেন বন কর্মকর্তা ও বনরক্ষীরা। এ ধরনের কাজে বন বিভাগের কারো জড়িত থাকার প্রমাণ পেলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
গোলপাতার সঙ্গে বন থেকে গাছ কাটা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘গোলপাতার সঙ্গে বন থেকে কোনো গাছ কাটতে পারবেন না বাওয়ালিরা। এমনকি নৌকায় ঝুল হিসেবেও কাঠ নেয়ার অনুমতি দেয়া হয়নি।’
বনদস্যুদের উৎপাতের বিষয়ে কোস্টগার্ডের পশ্চিম জোনের জোনাল কমান্ডার ক্যাপ্টেন মেহেদী হাসান বলেন, ‘গত ৫ আগস্টের পর সুন্দরবনসহ সংলগ্ন এলাকা থেকে ২২টি অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। পুলিশ, র্যাবসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তায় তালিকাভুক্ত ২৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।’