মনা যশোর প্রতিনিধিঃ
যশোর বেনাপোলের ঐতিহ্যবাহী শ্রী শ্রী ব্রম্ম হরিদাস ঠাকুরের পাটবাড়ি আশ্রমটি দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান। প্রতি বছর এখানে হরিদাস ঠাকুরের জীবনী, ভাগবত আলোচনা, কীর্ত্তন, নির্যান লীলা, আস্বাদন, ভক্তিগীতি ও পদাবলী কীর্ত্তনসহ নির্যানতিথী মহৌৎসব পালিত হয়। দেশের ৬৪টি জেলাসহ দেশ-বিদেশ থেকে হাজারো ভক্তের আগমন ঘটে এই আশ্রমে।শনিবার(১৬ আগষ্ট) উক্ত পাটবাড়ী আশ্রমে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের শ্রী শ্রীকৃষ্ণের জন্মাষ্টমী উদযাপণ হয়। ভক্তদের অনেক অনেক আনন্দ আর খুশীর মধ্য দিয়ে সম্পূর্ণ আশ্রম প্রাঙ্গণ মহৌৎসবে পরিণত হয়ে উঠে।শ্রী কৃষ্ণের জন্মাষ্টমী উৎসব উপলক্ষ্যে আশ্রম প্রাঙ্গণে এক আলোচনা সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ পূজা উদযাপণ পরিষদ,শার্শা উপজেলা শাখা ও বেনাপোল পৌর শাখা। এতে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ পূজা উদযাপণ পরিষদ,শার্শা উপজেলার সভাপতি-শ্রী বৈদ্যনাথ দাস। প্রধান অতিথি হিসেবে সেখানে উপস্থিত ছিলেন,শওকত মেহেদী সেতু(সহকারী কমিশনার,ভূমি,শার্শা উপজেলা)। অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন-বাংলাদেশ পূজা উদযাপণ কমিটির বেনাপোল পৌর শাখার সাধারণ সম্পাদক-শ্রী উজ্জল বিশ্বাস।
আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে সেখানে উপস্থিত হন,শার্শা উপজেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক-মো.নুরুজ্জামান লিটন,বেনাপোল পৌর বিএনপি’র সভাপতি-মো. নাজিম উদ্দিন,সহ:সভাপতি-এ কে এম আতিকুজ্জামান সনি ও বেনাপোল পৌর ছাত্রদল আহবায়ক-আরিফুল ইসলাম আরিফ সহ বিএনপি’র বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ এবং জামায়াত নেতা মাওলানা আজিজুর রহমান সহ জামায়াতের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।
অনুষ্ঠানে পূজা উদযাপণ পরিষদের পক্ষ থেকে অতিথিদেরকে একে একে উত্তোরিও পরিয়ে দেওয়া হয়। এরপর সেখানে সৌহার্দ্যপূর্ণ বক্তব্য রাখেন নেতৃবৃন্দ।আলোচনা শেষে দেশ ও জাতির কল্যাণে পূজা উদযাপণ কমিটি’র পক্ষ থেকে “মঙ্গল শোভাযাত্রা” বের করা হয়। এটি পাটবাড়ী আশ্রম থেকে শুরু করে প্রায় দেড় কিলোমিটার দুরে তীব্র তাপদাহ উপেক্ষা করে বেনাপোল স্থলবন্দর এলাকা প্রদক্ষিন শেষে বেনাপোল-যশোর মহাসড়ক হয়ে পূণরায় পাটবাড়ী আশ্রমে ফিরে আসে। এতে নেতৃত্ব দেন বাংলাদেশ পূজা উদযাপণ কমিটি,শার্শা শাখার সভাপতি-শ্রী বৈদ্যনাথ ও বেনাপোল পৌর শাখার সাধারণ সম্পাদক-শ্রী উজ্জল বিশ্বাস।এসময় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় সর্বদা নিয়োজিত ছিল বেনাপোল পোর্টথানা পুলিশ।
শ্রী কৃষ্ণের জন্মাষ্টমী সম্পর্কে জানতে পাটবাড়ী আশ্রমে আগত হিন্দু ধর্মাবলম্বী এক ভক্ত রাম চন্দ্র পাল জানান, “জন্মাষ্টমী হলো ভগবান শ্রীকৃষ্ণের শুভ জন্মতিথি। ভাদ্র মাসের কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী তিথিতে রোহিণী নক্ষত্রযোগে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ মধুরায় কংসের কারাগারে মাতা দেবকীর অষ্টম সন্তান হিসেবে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর এই জন্মদিনকে জন্মাষ্টমী বলা হয়। সনাতন ধর্বাবলম্বীরা দিনটিকে বিভিন্ন আনন্দ-উৎসবের মধ্য দিয়ে পালন করে থাকেন।ভগবদ্গীতা অনুসারে, কৃষ্ণ বা শ্রীকৃষ্ণ বিষ্ণুর অষ্টম অবতার। সনাতন ধর্মের বিশ্বাস অনুসারে তাঁকে স্বয়ং ভগবান এবং বিষ্ণুর পূর্ণাবতারও মনে করা হয়। গীতায় বলা হয়েছে যে, অধর্ম ও দুর্জনের বিনাশ এবং ধর্ম ও সজ্জনের রক্ষার জন্য তিনি যুগে যুগে পৃথিবীতে আগমন করেন এবং কৃষ্ণের এই আগমন ঘটে কখনো মানুষ, কখনো বা মানবেতর প্রাণির রূপে। একেই বলা হয় অবতার।পৌরাণিক কাহিনিমতে, কংসের বোন দেবকীর অষ্টম সন্তানের হাতে নিজের বিনাশের দৈববাণী শুনে সে সর্বদাই আতঙ্কে থাকত। ফলে সে তার বোনের গর্ভে সদ্যভূমিষ্ট প্রতিটি সন্তানকেই নৃশংসভাবে হত্যা করত। তবে গর্ভ স্থানান্তরিত করায় রোহিনীর গর্ভে জন্ম নেয় দেবকীর সপ্তম সন্তান বলরাম।সবশেষে অধর্মের বিনাশ ঘটাতে জন্ম হয় কৃষ্ণের। তবে তার প্রাণরক্ষার্থে ভগবান বিষ্ণুর নির্দেশ অনুসারে বাসুদেব কৃষ্ণপক্ষের সেই দুর্বার প্রলয়ের রাতে সদ্যভূমিষ্ট সন্তানকে মা যশোদার কাছে রেখে আসেন। পাশাপাশি মা যশোদার কন্যাকে নিয়ে আসেন।
এদিকে দেবকীর অষ্টম গর্ভের সন্তানের ভুমিষ্ঠ হওয়ার সংবাদ পেয়ে কংস ছুটে আসেন কারাগারে।এদিকে, “কৃষ্ণের সন্ধান না পাওয়ায় রাজা কংস কুখ্যাত পুতনা রাক্ষসীকে ছয়মাস বয়সী সব শিশুকে হত্যার আদেশ দেন। রাজা কংসের নির্দেশমতো রাক্ষসী পুতনা বিষাক্ত স্তন পান করানোর ছলে একের পর এক শিশুকে নির্মমভাবে হত্যা করতে থাকে। অবশেষে যখন পুতনা কৃষ্ণের সন্ধান পায় এবং তাকে স্তন পান করাতে যায়, তখন মাত্র ছয়মাস বয়সেই কৃষ্ণ স্তনপানের মাধ্যমে সব বিষ শুষে নিয়ে পুতনার প্রাণনাশ করেন”।ভগবদ্গীতায় ভগবান কৃষ্ণ মন্দের বিরুদ্ধে জয়ের প্রতীক। তিনি উল্লেখ করেছেন, যখনই পৃথিবীতে মন্দের উত্থান ঘটে এবং ধর্মের অবনতি ঘটে, তখন তিনি মন্দের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য পুনর্জন্ম লাভ করবেন এবং মানুষকে সঠিক পথে নিয়ে যাবেন। সেই থেকে “জন্মাষ্টমী” অশুভের উপর শুভবুদ্ধির জয় হিসেবে পালিত হয়”।