মোঃ নাজমুল শেখ, মাদারীপুর প্রতিনিধি।
মাদারীপুরে আওয়ামীপন্থীদের নিয়ে শ্রমিক দলের কমিটি গঠনে বাধা দেওয়ায় শ্রমিকদলের এক
নেতাকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। শ্রমিক দলে পদ
না পেয়ে আওয়ামী লীগের সাবেক কাউন্সিলর
আকতার হাওলাদারের ভাই লিটন হাওলাদার ও
তার লোকজন এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে বলে অভিযোগ
উঠেছে। রোববার (২৩ মার্চ) রাতে মাদারীপুর সদর
উপজেলার নতুন মাদারীপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
নিহত সাকিল মুন্সী (৩০) মাদারীপুর সদর উপজেলা
শ্রমিক দলের সভাপতি ও নতুন মাদারীপুর এলাকার
মোফাজ্জেল মুন্সীর ছেলে।
সোমবার (২৪ মার্চ) রাত একটার দিকে এ ঘটনা ঘটে
বলে সত্যতা নিশ্চিত করেছেন সদর থানার ভারপ্রাপ্ত
কর্মকর্তা (ওসি) মোকছেদুর রহমান।
পুলিশ, স্বজন ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সম্প্রতি
মাদারীপুর সদর উপজেলা ও পৌরসভা শাখা শ্রমিক
দলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা দেওয়া হয়। এ
কমিটিতে সেলিম মুন্সীকে উপজেলা শাখা শ্রমিক
দলের সভাপতি ও আওয়ামীলীগের সাবেক ওয়ার্ড
কাউন্সিলর আকতার হাওলাদারের ছোট ভাই
আওয়ামীপন্থী লিটন হাওলাদারকে পৌরসভা শাখা
শ্রমিক দলের সভাপতি করা হয়। এ নিয়ে ফুঁসে উঠে
শ্রমিক দলের একাংশের নেতাকর্মীরা। পরে পাল্টা
কমিটি গঠন করেন তারা। সেই কমিটিতে সদর
উপজেলা শ্রমিক দলের সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক
সাকিল মুন্সীকে সভাপতি ও পৌরসভা শাখায় হান্নান
ঢালীকে সভাপতি হিসেবে ঘোষণা দেন। পরে অর্থের
বিনিময়ে আওয়ামীপন্থীদের নিয়ে পৌর শ্রমিকদলের
কমিটি গঠনের অভিযোগ তুলে রোববার (২৩ মার্চ)
দুপুরে মাদারীপুর পৌর শহরের সুমন হোটেল
এলাকায় প্রতিবাদ সমাবেশ করেন সাকিল মুন্সী ও
হান্নান ঢালীসহ একাংশের নেতাকর্মীরা। এ নিয়ে দুই
গ্রুপের মধ্যে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়। এরই জেরে
আওয়ামীলীগ সমর্থিত সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর আকতার হাওলাদারের জামিন হবে জানতে পেরে
পুরান বিসিক এলাকায় তার ভাই লিটন হাওলাদারের
নেতৃত্বে একটি দল দেশীয় অস্ত্র নিয়ে মোটরসাইকেল
যোগে মহড়া দেয়। এসময় তাদের প্রতিপক্ষ শ্রমিক
দলের সভাপতি সাকিলের সমর্থক শহিদুল ইসলাম
যাচ্চু হাওলাদার ও রুবেল হাওলাদারের নেতৃত্বে
পাল্টা ধাওয়া দিলে পালিয়ে যায়। একপর্যায়ে বিসিক
সংলগ্ন নদীর পাড়ে নতুন মাদারীপুর এলাকায় দেশীয়
অস্ত্র ও হাতবোমা নিয়ে দুই গ্রুপের লোকজন সংঘর্ষে
লিপ্ত হয়। এসময় শ্রমিক দলের সভাপতি সাকিলকে
কুপিয়ে হত্যা করে আওয়ামীপন্থী লিটন ও তার
লোকজন। এ সংঘর্ষে প্রায় অর্ধশতাধিক হাতবোমা
বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গেছে।
মাদারীপুর পৌরসভা শ্রমিক দলের একাংশের
সভাপতি হান্নান ঢালী (নিহত সাকিল গ্রুপ) ঢাকা
পোস্টকে জানান, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র হত্যা মামলার
আসামি সাবেক পৌরসভার কাউন্সিলর আকতার
হাওলাদারের ছোট ভাই লিটন হাওলাদারসহ তার
আওয়ামীপন্থী লোকজন বিএনপিতে যোগদানের চেষ্টা করেছিল। সে পৌর শ্রমিক দলের সভাপতি পদ
চেয়েছিল। কিন্তু বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা আনিসুর
রহমান তালুকদার খোকন আওয়ামীপন্থীদের
বিএনপিতে যোগদান না করানোর জন্য তার
নেতাদের নিষেধ করেন। তাই তাকে শ্রমিক দলে
কোন পদ না দেওয়া বিএনপিতে যোগদানে ব্যর্থ
হয়। এরমধ্যে সে পোস্টারও ছাপিয়ে ফেলে। এজন্য
আমাদের উপর ক্ষিপ্ত হয়েছে। আমরা নাকি লিটনকে আওয়ামীলীগ থেকে বিএনপিতে যোগদানে বাধা দিছি। সে সদর উপজেলা শ্রমিক দলের অপর আরেকটি কমিটির সভাপতি সেলিম মুন্সীর হাত ধরে বিএনপিতে যোগ দিতে চেয়েছিল। উপজেলা শ্রমিক
দলের দুটি কমিটি। একটি কমিটির সভাপতি সাকিল
এবং আরেকটির সভাপতি সেলিম । ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে মাদারীপুর সদর থানার
ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোকছেদুর রহমান ঢাকা
পোস্টকে জানান, লিটন ও সাকিল গ্রুপের মধ্যে
সংঘর্ষ হয়। এতে সদর উপজেলা শ্রমিক দল নেতা
সাকিল নিহত হয়েছে। আমি ঘটনাস্থলে রয়েছি বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।