মোঃমামুন ডিমলা (নীলফামারী) প্রতিনিধি
বিধ্বংসী সড়ক দুর্ঘটনায় পা হারানো নীলফামারীর ডিমলার যুবক বকুল (২৫)-এর পাশে দাঁড়িয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইমরানুজ্জামান। ব্যক্তিগত উদ্যোগে হুইলচেয়ার উপহার দেওয়ার পাশাপাশি সরকারি সহায়তা ও কৃত্রিম পা সংযোজনের আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।
ঘটনাটি ঘটেছে ডিমলা উপজেলার পশ্চিমপাড়া গ্রামে। পরিবারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি বকুল ঈদুল আজহার ঠিক আগে একটি মালবাহী ট্রাকে হেলপার হিসেবে কাজ করতে গিয়ে ভয়াবহ দুর্ঘটনায় পড়েন। বগুড়ার মাটিডালি মোড়ে বিপরীত দিক থেকে আসা আরেকটি ট্রাকের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষে ঘটনাস্থলেই চালক নিহত হন, আর গুরুতর আহত অবস্থায় বকুলকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
প্রথমে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ এবং পরে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলেও চিকিৎসকদের সব চেষ্টা ব্যর্থ করে তাঁর ডান পা কেটে ফেলতে হয়। অপর পায়েও রড বসানো হয়েছে। বর্তমানে সম্পূর্ণ অক্ষম হয়ে পড়েছেন এই তরুণ।
বকুলের দুই সন্তান, স্ত্রী ও বৃদ্ধ মা-বাবাসহ ছয় সদস্যের পুরো পরিবার এখন অসহায় অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন। চিকিৎসা ব্যয়ে শেষ সম্বল বাবার জমি বন্ধক রেখে ইতোমধ্যে খরচ হয়েছে প্রায় সাড়ে তিন লাখ টাকা। ভবিষ্যতে কৃত্রিম পা সংযোজনের পরিকল্পনা থাকলেও অর্থাভাবে সেটিও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
বুধবার (৬ আগস্ট) সন্ধ্যায় ইউএনও ইমরানুজ্জামান বকুলের বাড়িতে গিয়ে হুইলচেয়ার উপহার দেন এবং বলেন,
“বকুলের মতো দুর্ঘটনাগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানো শুধু প্রশাসনিক দায়িত্ব নয়, এটি সামাজিক ও মানবিক কর্তব্যও। তাঁকে সরকারি সহায়তার আওতায় আনার চেষ্টা করছি। কৃত্রিম পা সংযোজনের ব্যবস্থাও করা হবে।”
তিনি সমাজের সামর্থ্যবানদেরও এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। ইউএনও’র সঙ্গে এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফারজানা আখতার, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মীর হাসান আল বান্না এবং উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. ওয়াসিম ইসলাম।
ইউএনও’র উপস্থিতিতে আবেগে ভেঙে পড়েন বকুলের মা। কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন,
“আমার ছেলে ছোটবেলা থেকেই সংসারের হাল ধরেছে। এখন সে নিজেই পঙ্গু হয়ে গেছে। মানুষের সাহায্য ছাড়া কিছুই করার নেই।
স্থানীয় বাসিন্দা সুজন খান বাবু বলেন,
“শুধু হুইলচেয়ার নয়, বকুলের দীর্ঘমেয়াদি পুনর্বাসন প্রয়োজন। তার জীবিকা নিশ্চিত করার জন্য একটি টেকসই পরিকল্পনা জরুরি।”
হুইলচেয়ার হাতে আবেগাপ্লুত বকুল বলেন,
“এই হুইলচেয়ার আমার নতুন পা। ভাবিনি ইউএনও স্যার নিজে এসে আমার পাশে দাঁড়াবেন। এখন শুধু চাই কৃত্রিম পা পেয়ে আবার কিছু একটা করে সংসার চালাতে পারি।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে দেশে ৭ হাজার ৮০৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৬ হাজার ৬৭২ জন নিহত এবং ৯ হাজার ১২০ জন আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে প্রায় ২৫ শতাংশ দুর্ঘটনাকেই পঙ্গুত্ব বরণ করতে হয়। বকুল এখন সেই পরিসংখ্যানের একটি করুণ প্রতিচ্ছবি।