
নিজস্ব প্রতিবেদক, কুষ্টিয়া:
শারদীয় দুর্গাপূজার ঠিক আগ মুহূর্তে কুষ্টিয়া ও নাটোর জেলার বিভিন্ন পূজা মণ্ডপে প্রতিমার অসুরের মুখ কাপড় ও গামছা দিয়ে ঢেকে দেওয়ার এক নজিরবিহীন ঘটনা ঘটেছে। প্রতিমায় অসুরের মুখে দাড়ি ও গোঁফ থাকায় ‘স্পর্শকাতর পরিস্থিতি’ এড়াতে এবং ‘সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি’ বজায় রাখার কারণ দেখিয়ে স্থানীয় প্রশাসন এই নির্দেশনা দিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
জানা গেছে, কুষ্টিয়া জেলার ৩৮টি পূজা মণ্ডপ এবং নাটোর জেলার বেশ কয়েকটি মণ্ডপে এই ঘটনা ঘটেছে। পূজা উদযাপন কমিটির সদস্যরা জানিয়েছেন, জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের মৌখিকভাবে এই নির্দেশনা দেওয়া হয়। এরপরই তারা প্রতিমার অসুরের মুখমণ্ডল ঢেকে দিতে বাধ্য হন।
কুষ্টিয়ার একটি পূজা মণ্ডপের আয়োজক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “আমরা প্রতি বছর ঐতিহ্য মেনেই প্রতিমা তৈরি করি। অসুরের ferocious (ভয়ংকর) রূপ ফুটিয়ে তুলতে দাড়ি-গোঁফ ব্যবহার করাটা শিল্পীর স্বাধীনতার অংশ। এটি কোনো নির্দিষ্ট সম্প্রদায়কে ইঙ্গিত করে তৈরি করা হয়নি। কিন্তু প্রশাসনের কর্মকর্তারা এসে বললেন, এতে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হতে পারে এবং অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে পারে। তাই আমাদের মুখ ঢেকে দিতে বলা হয়েছে।”
এই ঘটনায় প্রতিমা শিল্পী ও হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। অনেক শিল্পী মনে করছেন, এটি তাদের শিল্পকর্মের ওপর এক ধরনের হস্তক্ষেপ। একজন প্রতিমা শিল্পী বলেন, “পুরাণ মতে অসুরকে শক্তিশালী এবং ভয়ংকর হিসেবে দেখানো হয়। সেই রূপ ফুটিয়ে তুলতেই আমরা দাড়ি-গোঁফ বা বিভিন্ন অনুষঙ্গ ব্যবহার করি। এর সাথে বাস্তব কোনো গোষ্ঠীর সম্পর্ক খোঁজাটা দুঃখজনক।”
অন্যদিকে, অনেক পূজা কমিটির সদস্য অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে প্রশাসনের এই সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছেন। তারা বলছেন, উৎসবের সময় কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা হোক, তা তারা চান না। তাই ও সম্প্রীতি রক্ষায় এইটুকু ছাড় দিতে তারা রাজি।
এ বিষয়ে কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসন বা পুলিশ প্রশাসনের কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রশাসনের এক কর্মকর্তা জানান, “সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা করা এবং কোনো ধরনের উস্কানিমূলক পরিস্থিতি যেন তৈরি না হয়, তা নিশ্চিত করতেই এই সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আমরা চাই, সবাই মিলে শান্তিপূর্ণভাবে উৎসব উদযাপন করুক।”
একই ধরনের ঘটনা ঘটেছে নাটোরের বিভিন্ন মণ্ডপেও। সেখানেও স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে একই কারণ দেখিয়ে অসুরের মুখ ঢাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
এই ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই একে ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক চর্চায় হস্তক্ষেপ বলে মনে করছেন, আবার কেউ কেউ শান্তি রক্ষার জন্য প্রশাসনের এই পদক্ষেপকে সময়োপযোগী বলে মন্তব্য করেছেন। সব মিলিয়ে, পূজার আনন্দঘন পরিবেশে এই ঘটনা এক নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।