1. fakiraual842@gmail.com : নব দিগন্ত ২৪ : নব দিগন্ত ২৪
  2. rmriyad150@gmail.com : fokir :
  3. nobodigonto24.khag.dist.repse@gmail.com : Md. Mobinul Islam : Md. Mobinul Islam
শৈশবের বন্ধন মোবাইলের কারাগারে - নব দিগন্ত ২৪
বৃহস্পতিবার, ০৫ জুন ২০২৫, ১২:২৬ অপরাহ্ন
সর্বশেষ :
নবাবগঞ্জ থানা কর্তৃক ১৬৪০ লিটার দেশীয় চোলাই মদ ও চোলাই মদের উপকরন, চিটা গুড় ৫,৪০০ লিটার ও মাদক তৈরীর অন্যান্য উপকরণ সহ ২ জন মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতার রাজশাহীতে প্রতারণার মাধ্যমে ফ্ল্যাট কেনার অভিযোগ উঠেছে। দুমকিতে যুবকে কুপিয়ে জখম: দুই আসামি গ্রেফতার, একজনকে রাতে ছেড়েদিলো পুলিশ ঢাকা জেলা কেরানীগঞ্জ মডেল থানা কর্তৃক বিশেষ অভিযানে ৪৯১৬০ বোতল ভেজাল পানীয় জুস এবং জুস তৈরির উপকরণসহ গ্রেফতার ৭ ঠাকুরগাঁওয়ে হরিপুরে নবাগত ইউএনও’র মতবিনিময় ও পরিচিতি সভা অনুষ্ঠিত। কেরাণীগঞ্জ মডেল থানা কর্তৃক ডাকাতি মামলার ২৪ ঘন্টার মধ্যে ০৪ জন ডাকাত গ্রেফতার এবং ডাকাতি হওয়া ০১ টি গরুসহ পিকআপ উদ্ধার বগুড়ায় চোলাই মদ বিক্রেতা দুই জনের জেল-জরিমানা ছাত্র-জনতার উপর হামলা মামলার আসামী ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার  বংশালে ব্যবসায়ীর ১০ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ; দোকানের কর্মচারীসহ দুইজনকে রাজশাহী থেকে গ্রেফতার করেছে বংশাল থানা পুলিশ ২৪০০ পিস ইয়াবাসহ মাদক কারবারি চক্রের দুই সদস্যকে গ্রেফতার করেছে ডিবি

শৈশবের বন্ধন মোবাইলের কারাগারে

আলি শেখ
  • প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ৩ জুন, ২০২৫
  • ১ বার পড়া হয়েছে

মোঃ আলী শেখ, সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার :

“লেখক >>মোঃ ইমতিয়াজ চৌধুরী, অফিসার, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি

একটি সময় ছিল, যখন বিকেলের শেষ আলোয় মাঠ কাঁপিয়ে ছুটে চলত শিশুদের হাসি। স্কুল ছুটির ঘণ্টা বাজলে কেউ বই ব্যাগ ছুঁড়ে রেখে বল হাতে দৌড়াত, কেউ লুকোচুরি খেলায় ব্যস্ত হতো। খেলাধুলার মধ্যে দিয়ে শিশুরা শিখত মেলামেশা, দলবদ্ধতা, হার-জিতের বাস্তবতা, সহানুভূতি, দায়িত্ববোধ। অথচ আজ এই মাঠ, এই বিকেল, এই সজীবতা—সবকিছুই যেন গিলে খাচ্ছে এক যন্ত্র: মোবাইল ফোন।

এই যে প্রযুক্তি আমাদের হাতে অভাবনীয় শক্তি দিয়েছে, আমাদের শিশুদের হাতেও তার প্রবল প্রলোভন। নীল আলো, স্ক্রলের মুগ্ধতা, ইউটিউবের অবিরাম কনটেন্ট, গেমসের রঙিন মোহ—সব মিলিয়ে তারা আর মাঠে যেতে চায় না। ঘরের কোণে বসে মোবাইলেই তাদের ‘বিশ্ব’, ‘মাঠ’, এমনকি ‘বন্ধু’। অথচ এর ছায়া যে কী ভয়ংকর দীর্ঘ, তা হয়তো আমরা বুঝতে শুরু করেছি, কিন্তু প্রতিরোধ করতে পারছি না।

শিশুরা আজ খেলতে শেখে ভার্চুয়ালি। প্রতিপক্ষ অদৃশ্য, জয়ের আনন্দ নিঃসঙ্গ, হারলে নেই উৎসাহ। চোখের সমস্যা, স্থূলতা, একাকীত্ব, আবেগীয় অস্থিরতা—সব ধীরে ধীরে দখল করে নিচ্ছে তাদের শরীর ও মন। বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশ থেমে যাচ্ছে, যেহেতু খেলাধুলা আর কৌতূহলের প্রকৃত জায়গা তারা পাচ্ছে না। যন্ত্রের ভেতর তাদের শৈশব যেন হারিয়ে যাচ্ছে এক অদৃশ্য কর্দমে।

আমরা কি পারছি না শিশুদের স্বাভাবিক শৈশবে ফিরিয়ে নিতে? প্রশ্ন শুধু অভিভাবকদের জন্য নয়, রাষ্ট্র, সমাজ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান—সবার জন্যই। কেন শিশুদের হাতে অনিয়ন্ত্রিত মোবাইল তুলে দিচ্ছি আমরা? কেন প্রতিদিন তাদের আরও নির্জন আর ভার্চুয়াল করে তুলছি? শুধু ‘চুপ করিয়ে রাখার’ যন্ত্র যেন হয়ে না ওঠে মোবাইল।

শিশুরা খেলার মধ্য দিয়েই শেখে জীবনের পাঠ। মাঠের ধুলা, আকাশের নীল, গাছের ছায়া, বন্ধুর সঙ্গে ঝগড়া, আবার একসঙ্গে চিৎকার করে হাসা—এসবই গড়ে তোলে এক পরিপূর্ণ মানুষ। মোবাইল হতে পারে শিক্ষার সহায়ক, কিন্তু শৈশবের বিকল্প নয়।

তাই আমাদের এখনই সচেতন হতে হবে। পরিবারে মোবাইল ব্যবহারে শৃঙ্খলা আনতে হবে। স্কুলে খেলাধুলা বাধ্যতামূলক করতে হবে। পাড়ায় পাড়ায় মাঠ সংরক্ষণ ও শিশুবান্ধব পরিবেশ তৈরি করতে হবে। বেশি সময় নয়, প্রতিদিন অন্তত এক ঘণ্টা খেলাধুলা যেন শিশুর ন্যায্য অধিকার হয়।

শিশুরা মোবাইলের নয়, প্রকৃতির সন্তান। তারা ঘামবে, দৌড়াবে, গাছের পাতা ছিঁড়ে বল বানাবে—এটাই তাদের প্রকৃত শৈশব। আমরা যদি এখনই তাদের মোবাইলের আসক্তি থেকে ফিরিয়ে না আনি, তবে ভবিষ্যতের সমাজ হবে শারীরিকভাবে দুর্বল, মানসিকভাবে নিঃসঙ্গ এক প্রজন্মের।
এই নিঃসঙ্গতা কিন্তু কেবল একাকীত্ব নয়, এটি একপ্রকার নিঃশব্দ মনস্তাত্ত্বিক হাহাকার—যার ভাষা নেই, অথচ রক্তের ধমনীতে প্রতিনিয়ত তা প্রবাহিত। একসময় দেখা যাবে, একটি প্রজন্ম কথোপকথনের বদলে ইমোজির উপর নির্ভরশীল, হাসির বদলে রিঅ্যাকশনে অভ্যস্ত, এবং সংবেদনশীলতার বদলে অচেতন স্বরহীনতায় আবদ্ধ।

মনোবিজ্ঞানী ড. আরিফ রহমান এ প্রসঙ্গে বলেন,
“মোবাইলের অতিরিক্ত ব্যবহারে শিশুরা ধীরে ধীরে বাস্তব জগতের সঙ্গে সংযোগ হারিয়ে ফেলে। তারা ভিন্ন বাস্তবতায় অভ্যস্ত হয়, যেখানে প্রতিটি জয় প্রোগ্রামড, প্রতিটি সম্পর্ক কৃত্রিম। বাস্তব জীবনের জটিলতা তখন তাদের কাছে হয়ে ওঠে ভীতিকর।”

তিনি আরও বলেন, “১০ বছরের কম বয়সী শিশুদের স্ক্রিন এক্সপোজার যদি দিনে ২ ঘণ্টার বেশি হয়, তাহলে তাদের ঘুমে সমস্যা, আবেগের ভারসাম্যহীনতা, এবং যোগাযোগ দক্ষতায় স্থায়ী ঘাটতি দেখা দিতে পারে।”
একজন মা বলছিলেন,
“আমার ছেলেটা মাঠে গিয়ে খেললে আমি খুশি হতাম। এখন দেখি মোবাইল ছাড়া ও যেন নিঃশ্বাসই নিতে পারে না। প্রথমে মনে হতো, মোবাইল দিলে ও শান্ত থাকে, কিন্তু এখন বুঝি, আমরা শান্তির নামে ওকে এক ভয়ানক নেশায় ঠেলে দিয়েছি।”

এই নেশা—হ্যাঁ, একে আমরা “আসক্তি” বলি, কিন্তু মোবাইল সত্যিই একপ্রকার ডিজিটাল মাদক। মনস্তত্ত্ববিদরা একে বলেন “ডোপামিন-চক্র”। প্রতিটি ভিডিও, প্রতিটি নতুন স্তরের জয় ডোপামিন নিঃসরণ ঘটায়, আর সে সুখের খোঁজে শিশু বারবার ফেরে সেই স্ক্রিনে।

আমাদের সাহিত্যেও এই শৈশবের ক্ষয় লক্ষ করা যায়। জীবনানন্দ দাশ তাঁর কবিতায় বারে বারে প্রকৃতির সঙ্গে মিশে থাকা শৈশবের কথা বলেন—
“আবার আসিব ফিরে ধানসিঁড়িটির তীরে—এই বাংলায়…”

কিন্তু বর্তমান শিশুরা কোথায় ফিরবে? মোবাইলের কাচে বন্দী হয়ে তাদের মনোজগত কি আর প্রকৃতি চেনে? তারা কি পাখির ডাক শুনে চমকে ওঠে? তারা কি সন্ধ্যার আলো ফুরালে ছুটে যায় ঘরে?

এখানেই আমরা ব্যর্থ হচ্ছি—পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র সবাই মিলে। মাঠ রক্ষার পরিবর্তে গড়ে উঠছে মার্কেট, মল, পার্কে খেলাধুলার জায়গা সংকুচিত হয়ে পড়েছে।তাই যদি চেষ্টাটুকু করা যায়, শিশুরা এখনও ফিরতে পারে প্রকৃত শৈশবে।
তাদের হাতে মোবাইলের বদলে দিন একটি বল, একটি রঙ পেন্সিল, একটি বই।
তাদের সময় দিন।
শৈশব মানেই তো উড়তে শেখা—সেই উড়ান যেন না থেমে যায় মোবাইলের স্ক্রিনে।

আজকের শিশুরা ভবিষ্যতের কর্ণধার। যদি তারা আজ সুস্থ শরীর, উজ্জ্বল মন ও মানবিক সংবেদনের অভ্যাস নিয়ে বড় না হয়, তবে আমরা এমন এক সমাজ গড়ব—যেখানে থাকবে প্রযুক্তি, কিন্তু থাকবে না হৃদয়।

তাদের ফিরিয়ে দিন মাঠে, প্রকৃতির কোলে, জীবনের আনন্দে।
তারা যেন মানুষ হয়ে উঠতে পারে—কেবল এক স্ক্রিনের দর্শক হয়ে নয়।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো সংবাদ পড়ুন
© নব দিগন্ত ২৪
ওয়েবসাইট ডিজাইন: ইয়োলো হোস্ট