নিজস্ব বেনাপোল প্রতিনিধি :- বহিরাগত কুতুব উদ্দিন গং এর তান্ডবে এখন ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছে বেনাপোল রেল স্টেশন চত্তর সহ ঐ এলাকার বসবাসকারী শান্তিপ্রিয় মানুষ। নির্বিঘ্নে উঠা-নামা করতে পারছেন না রেল যাত্রীসকল। নির্ভয়ে কাজ করতে পারছেন না রেল কর্মকর্তা/কর্মচারী/রেল শ্রমিক এবং দিনমুজুর খ্যাত রেল স্টেশনে কর্মরত সাধারণ লেবার(কুলি) সদস্যরা।
বৃহস্পতিবার(১৯ জুন) সন্ধ্যায় রেল স্টেশনে প্রায় ২০/২৫ বছর যাবৎ কর্মরত লেবার(কুলি) ষাটোর্দ্ধো বয়সী করম আলী এসব কথা সাংবাদিকদের জানিয়েছেন। তিনি বলেন, গত ১৪ জুন শনিবার দুপুরে বেনাপোল রেলওয়ের একটি লেবার টেন্ডারকে কেন্দ্র করে রেল চত্তর এলাকায় সাধারণ লেবারদের উপর লোহার রড,হকিষ্টিক দিয়ে অতর্কিতে হামলা চালায়,এতে লেবারদের দুই পক্ষের অনেকেই আহত হন। পরে এলাকার মানুষের ধাওয়া খেয়ে কুতুব গংয়েরা পালিয়ে যায়।
ক্ষোভ প্রকাশ করে ষাটোর্দ্ধ করম আলী বলেন, বিগত ২৫ বছর যাবৎ এই বেনাপেল রেল স্টেশনে রেল লেবার(কুলি) হিসেবে কাজ করছি,যাত্রীদের ব্যাগ/ল্যাগেজ মাথায় নিয়ে যাত্রীসেবা করে থাকি এবং তা থেকে যা পারিশ্রমিক পায় তাই দিয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে বেঁচে আছি,যাত্রী উঠা-নামা কম হলে অনেক কষ্টে দিন পার করতে হয় আমাদের। কিন্তু গেল বছর ২০২৪ সালের দিকে রেল কর্তৃপক্ষ আমাদেরকে জানাই নিবন্ধিত শ্রমিক ছাড়া রেল স্টেশনে কাজ করতে পারবে না। নিবন্ধনের ব্যাপারে আমরা প্রায় ২৫/৩০ জন শ্রমিক বেনাপোল রেল স্টেশনের সাবেক এক কর্মকর্তা (বর্তমানে অবসরে চলে গেছেন) তার সাথে যোগাযোগ করি। নিবন্ধন করতে প্রতি জনকে ১০হাজার টাকা দিতে হবে বলে তিনি আমাদেরকে জানান। আমরা গরীব অসহায় কোত্থেকে পাব এত টাকা। তারপরও নিজেদের কিছু সম্পদ বিক্রি করে ঐ রেল কর্মচারীর নিকট টাকা প্রদান করি। কিন্তু দিন যায় মাস যায় তিনি আমাদের নিবন্ধনের কাজ করে দেয়নি। ফলে,আমরা বিপদে পড়ে যায়। রেল কর্তৃপক্ষ আমাদেরকে রেল স্টেশনে ঢুকতে বাধা প্রদান করে। আমরা স্টেশন মাস্টারের নিকট অনুনয়-বিনয় করে রেল স্টেশনে যাত্রীদের ল্যাগেজ-ব্যাগেজ বহনের কাজ করে আসছি। সরকার আমাদের কোন বেতন দেয় না,যাত্রীদের কাছ থেকে যে পারিশ্রমিক পায় তা দিয়ে আমার পরিজন নিয়ে জীবন-যাপণ করি। যাত্রী উঠা-নামা কম হলে আমাদের আয় হয় না,ধার দিনাই সারা মাস অভাব অনটনের মধ্যে আমাদের দিন কাটে।
১৪ জুন ঘটনার কথা উল্লেখ করে করম আলী বলেন,ঐ দিন আমরা দুপুরের দিকে কয়েকজন লেবার(কুলি) যাত্রী ট্রেনের জন্য স্টেশন প্লাটফর্মে অপেক্ষা করছিলাম। এমন সময় বহিরাগত ঐ কুতুব গংয়ের ২০/২৫ জন সদস্য লোহার রড,হকিষ্টিক এবং লাঠি-শোঠা নিয়ে আমাদেরকে প্লাটফর্ম ছেড়ে যেতে বলে এবং আমাদেরকে তারা আর কাজ করতে দেবে না। প্রতি উত্তরে আমরা বললাম,কেন এবং কি কারনে আমাদেরকে কাজ করতে দেওয়া হবে না? এর কোন জবাব না দিয়ে ঐ সন্ত্রাসী বাহিনী আমাদের উপর এলোপাতাড়ী হামলা চালায়,উক্ত হামলায় দুই পক্ষের বেশ কয়েকজন লেবার সদস্য আহত হয়। পরে স্থানীয় বাসিন্দাদের ধাওয়া খেয়ে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়।
কাঁদো সুরে কদম আলী সাংবাদিকদের বলেন, রেল সংলগ্ন পাশের গ্রামেই আমাদের বাড়ী। রেলের কার্যক্রম শুরু থেকে আমি এবং আমার সহকর্মীরা এই কুলি’র কাজ বেছে নিয়েছে,লেখাপড়া জানিনা, স্টেশন থেকে তাড়িয়ে দিলে আমরা পরিবার পরিজন নিয়ে কিভাবে বাঁচবো?
ঘটনার সঙ্গে বিএনপি’র কোনো নেতা-কর্মীর সম্পৃক্ততা নেই বলে স্রেফ জানিয়ে দিয়ে জাতীয়তাবাদী লেবারদলের সর্দার রমজান আলী বলেন,যারাই এই ঘটনা ঘটিয়েছে,তাদেরকে অনতি বিলম্বে আইনের আওতায় এনে শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। ঐ ঘটনায় আমাকে এবং বিএনপিকে জড়িয়ে বিভিন্ন প্রোপাগান্ডা ছড়ানো হচ্ছে,যা রীতিমত শিষ্টাচার লংঘন এবং সন্মানহানীকর। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে রেলের এই টেন্ডার আওয়ামী লীগের লোকজন নিয়ন্ত্রণ করে আসছিল। কিন্তু ৫ আগস্টের পর তারা আত্মগোপনে থাকলেও রেলস্টেশন এলাকায় তাদের সতীর্থজনেরা ফ্রি-স্টাইলে চালিয়ে যাচ্ছে তাদের সন্ত্রাসী কার্যক্রম।
এ বিষয়ে বেনাপোল পোর্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রাসেল মিয়া জানান, বেনাপোল রেলস্টেশনে লেবারদের দুই পক্ষের সংঘর্ষে,কোনো পক্ষই এখন পর্যন্ত থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেনি।