মনা নিজস্ব প্রতিনিধিঃ
সড়ক দুর্ঘটনা তদন্তে দক্ষতা বাড়াতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কর্মকর্তাদের জন্য দুই দিনব্যাপী একটি আন্তর্জাতিক মানের প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আন্তর্জাতিক সংস্থা গ্লোবাল রোড সেফটি পার্টনারশিপ (জিআরএসপি) এর আয়োজনে রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে ১৬ ও ১৭ জুন এই কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। ডিএমপি’র বিভিন্ন ইউনিটের ৬০ জন পুলিশ কর্মকর্তা এতে অংশগ্রহণ করেন।
সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী, এনডিসি। তিনি বলেন, সড়কে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। রাজনৈতিক কর্মসূচির কারণে সড়কে সৃষ্ট দুর্ভোগ কমাতে আমরা রাজনৈতিক দলগুলোর নেতৃবৃন্দকে অফিস খোলার দিনে কর্মসূচি এড়ানোর অনুরোধ জানিয়েছি। তিনি আরও বলেন, বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে রোড ক্র্যাশ তদন্ত করলে দুর্ঘটনার কারণ চিহ্নিত করে ভবিষ্যতে মৃত্যু কমানো সম্ভব। এজন্য পুলিশ সদস্যদের দক্ষতা বাড়ানোর উপর জোর দেন তিনি। এছাড়া ভবিষ্যতে ট্রাফিক পুলিশকেও তদন্ত প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত করার পরিকল্পনার কথা জানান তিনি।
ডিএমপি কমিশনার সড়ক ব্যবহারকারীদের গতিসীমা মেনে চলা, হঠাৎ লেন পরিবর্তন না করা এবং নিরাপদে রাস্তা পার হওয়ার পরামর্শ দেন। তিনি উল্লেখ করেন, ঢাকায় অধিকাংশ দুর্ঘটনা মধ্যরাত থেকে ভোরের মধ্যে ঘটে যখন সড়ক তুলনামূলক ফাঁকা থাকে। তিনি পুলিশ সদস্যদের গতিসীমা নিয়ন্ত্রণ ও ট্রাফিক আইন কঠোরভাবে প্রয়োগের নির্দেশ দেন।
কর্মশালায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ডিএমপি’র অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মো. সারওয়ার বিপিএম- সেবা। তিনি বলেন, চালক, যাত্রী ও পথচারীসহ সকল সড়ক ব্যবহারকারী যদি ট্রাফিক নিয়ম মেনে চলেন, তাহলে দুর্ঘটনার ঝুঁকি অনেকাংশে কমবে। তিনি ট্রাফিক বিভাগের কার্যক্রমে সহযোগিতার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানান।
কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন ব্লুমবার্গ ফিলানথ্রপিস ইনিশিয়েটিভ ফর গ্লোবাল রোড সেফটি (বিআইজিআরএস) এর কোঅর্ডিনেটর ও সাবেক অতিরিক্ত সচিব আবদুল ওয়াদুদ। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সুপারিন্টেনডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মাহবুব আলম অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন। এছাড়া ডিএমপি’র ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, জিআরএসপি প্রতিনিধি এবং বিআইজিআরএস কর্মসূচির সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।
দুইদিন ব্যাপী কর্মশালায় আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত রোড ক্র্যাশ তদন্ত কৌশল এবং বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির উপর বিস্তারিত আলোচনা হয়। জিআরএসপি’র এশিয়া-প্যাসিফিক ম্যানেজার ব্র্যাট হারম্যান এবং সিনিয়র রোড পুলিশিং অ্যাডভাইজর পিটার জোনস এই প্রশিক্ষণ পরিচালনা করেন। তারা ঘটনাস্থলে দ্রুত পৌঁছানো, আলামত সংগ্রহ, ক্ষতিগ্রস্ত যানবাহন ও টায়ারের চিহ্ন পর্যবেক্ষণ, হ্যাডন ম্যাট্রিক্সের প্রয়োগসহ বিশ্বব্যাপী প্রচলিত তদন্ত পদ্ধতি সম্পর্কে কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দেন। এই প্রশিক্ষণের মূল লক্ষ্য ছিলো বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এসব কৌশল কার্যকরভাবে প্রয়োগ করে সড়কে মৃত্যু ও গুরুতর আঘাতের ঝুঁকি কমানো।
কর্মশালা শেষে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মো. সারওয়ার বিপিএম-সেবা অংশগ্রহণকারীদের মাঝে সনদপত্র বিতরণ করেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন এনফোর্সমেন্ট কোঅর্ডিনেটর গোলাম হোসেন, ট্রান্সপোর্ট কোঅর্ডিনেটর রেজাউর রহমান, সার্ভিলেন্স কোঅর্ডিনেটর ডা. তানভীর ইবনে আলী এবং ভাইটাল স্ট্রাটেজিসের টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজর আমিনুল ইসলাম সুজন।